শুক্রবার মানেই সিনেমা হলে দম চাপা উত্তেজনা। প্রত্যেক চলচ্চিত্র নিয়েই সব পরিচালকের একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করে যা মুক্তি পাওয়ার পর আরও বাড়িয়ে দেয়। এই শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ জুলাই মুক্তি পেল, ‘রবিন্স কিচেন’। ছবির মেরুদণ্ড হিসাবে ধরা হচ্ছে বনি সেনগুপ্ত ও প্রিয়াঙ্কা সরকারের অভিনয়। বাংলা ছবির এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় মুশকিল, সদিচ্ছা ও ফলাফলের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। সেকথা আরও একবার প্রমাণিত হল বাপ্পা-র কাহিনি ও নির্দেশনায় ‘রবিন্স কিচেন’-এ।
দীর্ঘদিন আগে বাংলা টেলিভিশনে তৈরি হওয়া ‘স্বাদ’ বা বাংলাদেশের পাল্প-দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেওয়া মোহম্মদ নাজিমউদ্দিনের ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ সম্পর্কে এখন অনেকেই অবগত। টমাস হ্যারিসের ‘দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’ উপন্যাস, একেবারে হালে চেলসি জি সামার্সের ‘আ সার্টেন হাঙ্গার’ আলোড়িত করেছে থ্রিলার-ভক্তদের। ‘রবিন্স কিচেন’ কিছুটা একই ধরণের গল্পকে কে কেন্দ্র করে বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই কাহিনী প্রেম, জীবনের ওঠাপড়ার আবেগঘন মুহূর্তকে সামনে রেখে তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু চিত্রনাট্যের মূল সমস্যাটা হল, তা কখনও ফুড মুভি, কখনও প্রেমের ছবি, কখনও বা নেহাত থ্রিলারের আবর্তে ঘুরতে থাকে। প্রধানত কোন জনারটাকে পরিচালক ধরতে চেয়েছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি।
নির্মাণ ও সম্পাদনাতেও তার ছাপ স্পষ্ট। ছবিতে গান একটিই, কিন্তু গান ছাড়াও বিবিধ দীর্ঘায়িত দৃশ্য ও মন্তাজ ছবির গতিতে বাধা দিয়েছে। গল্পের মূল বিষয়, রবিন নামের এক ব্যক্তি একটি ক্যাফে খুলেছে, যার মূল আকর্ষণ, তার মায়ের অনুপ্রেরণায় শেখা একটি রান্না, চিকেন চিজ তন্দুরি। তার দুই বন্ধু, সোহেল ও অনুভব তার সঙ্গী। এই দলে এসে যোগ দেয় নীহারিকা। নীহারিকা ও রবিন, দুজনেরই বাবা-মা নেই। রবিনের অতীতের আভাস দর্শক কিছুটা পায়, যে অতীতে রহস্য আছে। এর মধ্যেই অরিত্র বণিক নামে এক ছাত্রনেতার আবির্ভাব ঘটে। সে কাফের জমি দখল করতে চায় প্রোমোটারের ইন্ধনে। নীহারিকা আর রবিনের প্রেমও শুরু হয়। কিন্তু এর মধ্যেই ঘনায় অন্ধকার। সঙ্গে রহস্য জমে রান্নার রেসিপি নিয়েও।
বনি সেনগুপ্ত ও প্রিয়াঙ্কা সরকার- ছবির মূল দুই অভিনেতাই ছবির মেরুদণ্ড হয়ে ওঠেন। বার বার প্রিয়াঙ্কা ও বনির অভিনয় প্রমাণ করে দিয়েছে তারাই এই গল্পটিকে ধরে রেখেছে। বনির পরিণত অভিনয় প্রশংসনীয়। প্রিয়াঙ্কা সরকার মালিন্যের মধ্যেও উজ্জ্বলতার দীপ্তি জ্বালিয়েছেন তাঁর উপস্থিতি ও অভিনয়ের মাধ্যমে। গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়ার মতো অভিনয় করেছেন শান্তনু নাথ। ছবির শেষ থেকেই স্পষ্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্মাণের সূত্র রয়েছে, অন্যদিকে সিক্যুয়েলের আভাস রয়েছে এই ছবিতে।