তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যেই তা ২ সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। আর তার জেরে ওই হাসপাতালেও অচলাবস্থা বজায় রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রায় সব দাবিই মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। আন্দোলনকারীদের দাবি মতন হাসপাতালের বেশ কিছু আধিকারিককে বদলিও করে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কর্মবিরতি ওঠেনি। এমনকি দফায় দফায় কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার বার্তা দিলেও আন্দোলনকারীরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় আর জি করে অচলাবস্থা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব দ্রুত একটি বৈঠক ডাকতে পারেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠকে ডাকা হবে আর জি কর হাসপাতালের সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের। বৈঠক হবে নবান্নের সভাঘরে। যদিও সেই বৈঠকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা যোগ দেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
আর জি করে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা রবিবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করেন। জারি করা হয় একটি প্রেস বিবৃতিও। তাতে বলা হয়, তাঁদের আন্দোলনের মূল দাবি হল তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ন্যায়বিচার। কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা যে দুষ্ট চক্রের জন্য আর জি করে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটল ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হল, সেই চক্রের লোকজনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় উঠবে না কর্মবিরতি। এই চক্রে সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি আরও কয়েক জন কর্তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছে সিনিয়র ডাক্তারদের একাধিক সংগঠনও। শনিবার স্বাস্থ্যভবনে আয়োজিত অচলাবস্থা কাটানোর বৈঠকে বিভিন্ন চিকিৎসক ও সংগঠনের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফোরাম-কেও। কিন্তু রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যেতে অস্বীকার করে ফোরাম। আর তাই প্রশ্ন থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকেও আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসকেরা যোগদান করবেন কিনা তা নিয়ে। ঘটনা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার জেরে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ জাগছে আন্দোলনের নেতৃত্বদের নিয়ে।
তাঁদের অভিযোগ, সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে, আন্দোলনের মাথারা যারা ওই হাসপাতালেরই জুনিয়র চিকিৎসক তাঁরা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাম-বিজেপি নেতারা ফোন করে তাঁদের যা নির্দেশ দিচ্ছেন, সেটাই তাঁরা করছেন। আন্দোলন এখন আর চিকিৎসকদের আন্দোলন নেই। তা কার্যত হাইজ্যাক করেছে বাম-বিজেপি। সেখান থেকেই নির্দেশ আসছে কর্মবিরতি না তুলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। সূত্রে মারফত জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই আর জি কর হাসপাতালের নতুন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিল। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকরা নাকি সেই পদক্ষেপ সমর্থন করেননি। আর যেহেতু জুনিয়র চিকিৎসকদের বড় অংশই কর্মবিরতির পক্ষে তাই সংখ্যালঘু জুনিয়র চিকিৎসকেরা নিজেদের ইচ্ছায় কাজে যোগ দিতে পারছেন না। তবে সূত্রের খবর, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কানে বিষয়টি যাওয়ায় তাঁরা এবার নবান্নের শীর্ষমহলকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক ডাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন বলেই জানা গিয়েছে। তবে সেই বৈঠকের দিন এখনও ঘোষিত হয়নি।