আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয় রায় নামটা এখন বাংলার তো বটেই গোটা দেশের মানুষের কাছে বেশ সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। কেননা আর জি কর কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত এই সঞ্জয় রায়কেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ, যদিও এখন সে রয়েছে সিবিআই হেফাজতে। প্রথম দিকে আর কর কাণ্ডের জেরে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, সঞ্জয়কে ফাঁসানো হয়েছে বা সঞ্জয়ের সঙ্গে ওই ঘটনায় আরও কেউ কেউ ছিল, যাদের রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুলিশ বাঁচিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু গতকাল সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতির যে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে, নানা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হচ্ছে, সেই রিপোর্টে গণধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সঞ্জয় একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে এমনটাই তাই এখনও পর্যন্ত সামনে উঠে আসছে। এবার সেই সঞ্জয়ের হয়ে আইনি লড়াইয়ে মাঠে নামছেন বাংলারই এক কন্যা। বছর ৫২’র আইনজীবী কবিতা সরকার।
আরজি কর কাণ্ডের নিন্দা সর্বস্তরে সব মহলেই হয়ে চলেছে। আর তাই কোনও আইনজীবীই সঞ্জয়ের হয়ে আদালতে সাওয়াল করতে চাইছিলেন না। যেহেতু সঞ্জয় এখন সিবিআই হেফাজতে আছে এবং কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই কলকাতা পুলিশ সঞ্জয়কে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে, তাই সঞ্জয়ের আইনজীবী জোগাড় করে দেওয়ার বিষয়টিও সিবিআইয়ের ঘাড়েই বর্তেছিল। কিন্তু সঞ্জয়কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর থেকেই বড় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল সিবিআই। কেননা কোনও আইনজীবীই সঞ্জয়ের হয়ে সাওয়াল করতে চাইছিলেন না। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। সঞ্জয় রাইয়ের হয়ে আদালতে সাওয়াল করতে দেখা যাবে কবিতা সরকারকে। এদিন অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই তিনি সঞ্জয়ের হয়ে সাওয়াল করবেন আদালতে। সেই সাওয়াল পর্ব এদিন থেকে শুরু হতে চলেছে শিয়ালদা আদালতে। সঞ্জয়ের হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছিল সিবিআই। আটকে গিয়েছিল তার পরিগ্রাম টেস্টও। সেই আইনি জটিলতার অবসান ঘটে গেল।
জানা গিয়েছে, কবিতাদেবী স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির আইনজীবী। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এখন তিনি অকপটে স্বীকার করছেন, এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন কেস। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি সঞ্জয়ের হয়ে আইনি লড়াই করলেও বাকিদের মতো আমিও নির্যাতিতার বিচার চাই। তবে আমার জন্যে বিচার হল, যখন আদালতে আইনি লড়াই সম্পন্ন হয়। তার আগে না। এই দেশে সবারই আইনি অধিকার আছে। সবারই নিজেকে রক্ষা করার অধিকার আছে। অভিযুক্তেরও সেটা আছে। আর এখানে আমাকে আমার কাজ করতে হবে।’ একই সঙ্গে কবিতা জানিয়েছেন, এই মামলায় তিনি সঞ্জয়ের হয়ে লড়াই করলেও, তিনি চান না এখনই তাঁর ছবি প্রকাশ করা হোক সংবাদমাধ্যমে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে মানুষ খুবই রেগে আছে। আমাকে কেউ আঘাত করবে, সেই ভয় আমি পাচ্ছি না। কিন্তু সেই রকম কিছু হলে এই মামলা থেকে নজর ঘুরে যেতে পারে। তাই আমি চাই এখনই যেন আমার ছবি প্রকাশ্যে না আসে।’