আর জি করের ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ বিক্ষোভে ক্রমেই মিশছে রাজনীতির রং। এই আবহে বিরোধীদের উস্কানিতে যেকোনও মুহূর্তে আন্দোলনকারীরা নবান্ন অভিযান করতে পারে আশঙ্কা করে মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। নবান্ন সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রচুর সংখ্যায় লোহার ব্যারিকেড মজুত রাখা হয়েছে। শিবপুর, কাজিপাড়া, মন্দিরতলা, নবান্ন বাসস্ট্যান্ড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সহ প্রায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কড়া পুলিসি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা যাতে কোনও রাস্তা দিয়ে নবান্ন অভিমুখে আচমকা ঢুকে পড়তে না পারে, তার জন্য শিবপুর থানার কয়েকটি পেট্রলিং ভ্যান দিনভর টহল দিয়ে চলেছে। শুধু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিই নয়, নবান্নর আশপাশের বিভিন্ন ছোট রাস্তা ও গলিও কড়া নজরদারির মধ্যে থাকছে। বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনের নির্দেশে মন্দিরতলা-ধর্মতলা রুটের বাসগুলি কাজিপাড়া থেকে চালানো হচ্ছে।
এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘নবান্ন অভিযান’র ডাক দেওয়ায় এখন থেকেই কোমর বাঁধছে পুলিশ। বিতর্ক ছড়িয়েছে, শুভেন্দুর ‘গুলি চালানো’র মন্তব্যকে ঘিরেও। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদী সামাজিক আন্দোলনের মূল স্রোতে দেখা যাচ্ছিল না বিজেপিকে। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, আন্দোলনের পিছনে এবং ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে গেরুয়া শিবির বড় ভূমিকা পালন করছে। তবে এখন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রকাশ্যেই যোগসাজশ গড়ে তুলতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির নেতানেত্রীদের। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা থেকে শুরু করে পদ্মপার্টির ছোট, বড়, মাঝারি নেতারা বারবার আর্জি জানিয়েছেন-‘একবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিন, বাকিটা বিজেপির ওপর ছেড়ে দিন।’ আর সেটাই এখন ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামের ব্যানারে ২৭ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর সেই অভিযানে, বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের কর্মীরা ছাড়াও মাওবাদী ও নকশালরাও থাকবে। চূড়ান্ত তাণ্ডব লীলা চালানো হতে পারে সেদিন। আর সেই সূত্রেই নবান্নের নিরাপত্তা আঁটসাট করার পথে হাঁটা দিতে বাধ্য হয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের গোয়েন্দারা খবর পাচ্ছেন, নবান্ন অভিযানের নামে গত ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্ল্যান কষা হয়েছে। ব্যাপক হাঙ্গামা, ভাঙচুর, অবরোধের পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই হাওড়ার পাঁচলার রানিহাটির এক ডেরা ও মধ্য কলকাতার এক আস্তানায় ‘বৈঠক’ও হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কোনওরকম অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে না তো? এ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন প্রশাসন। একই সঙ্গে পুলিশের নজর থাকছে সোশ্যাল মিডিয়ার দিকেও। খোঁজ চলছে, ইউজিসি নেট পরীক্ষার দিন, ছাত্র সমাজের নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্যোগ নিয়েছে যারা, তারা ঠিক কারা? প্রকাশ্যে বাম ও বিজেপির ছাত্রনেতারা জানাচ্ছেন, তাঁরা কেউই এই বিষয়ে কিছু জানেন না। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ পুলিশ। তাঁদের আশঙ্কা, ২৭ তারিখ কার্যত নবান্ন অভিযানে এমন কোনও অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হতে পারে যাতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ‘গুলি’ মন্তব্যেই সেই ইঙ্গিত ধরা পড়েছে। যদিও বাম দলগুলির ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই অভিযানে সামিল হবেন না। কিন্তু এই কথা মানতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন।