রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব কি কোনঠাসা করে দেবে ভারতকে? বিশ্ব কূটনৈতিক তথা বাণিজ্য বাজারে রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব কি ‘ভারী’ হয়ে উঠবে ভারতের জন্যে? বিশ্বের প্রায় সব শক্তিশালী দেশের সঙ্গেই ভারতের ভাল সম্পর্ক তাহলে হঠাৎ বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে ভারতের অবস্থা খারাপ হলো কেন? কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে ভারত খুবই ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এসেছে যে কারণে জি৭ গোষ্ঠীর সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায় ভারত। এইবার প্রধান মন্ত্রীর তৃতীয়তম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রনেতারা, শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছে বাকি অনেকেই।
এত ভালো সম্পর্ক রাখা সত্ত্বেও কি এমন সমস্যা যা নয়াদিল্লিকে সমস্যায় ফেলতে পারে? সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এ বার ভারতের কয়েকটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাপান যার ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে ভারতের। ভারত এবং জাপানের সম্পর্ক ভালো অনেক দশক ধরেই, ইতিহাসের পাতায় জাপান এবং ভারতের বন্ধুত্বের কিস্সা শুরু হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই। স্বাধীনতার পরেও ভারতকে নানা ভাবে নানা ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জাপান। ভারতীয় বাজারে বহু জাপানি সংস্থা সফল ভাবে ব্যবসা করছে। জাপানেও অনেক ভারতীয় সংস্থা ব্যবসা চালাচ্ছে। সেই সব সংস্থাগুলির মধ্যে কয়েকটির উপর এবার নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে জাপান সরকার। কিন্তু এত বছরের ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও কেন রুষ্ট হলো জাপান? শোনা যাচ্ছে রাশিয়ান সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সংস্থার উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে জাপান। ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে রাশিয়া।
২ বছর পরেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষ্য নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে পারেন শুধু মাত্র একটা শর্তে – ইউক্রেনকে ছাড়তে হবে নেটোর ছাতা। ইউক্রেনের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য পেশ করা হয়নি। তবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ‘একঘরে’ করে দিয়েছে আমেরিকা-সহ ইউরোপের অনেক দেশ। আমেরিকা, ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ভারতের তবে রাশিয়ার ইস্যুতে ভারত তাদের সাথে একমত নয়। রাশিয়ার উপর কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি ভারত। এমনকি, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি সুইৎজ়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত শান্তি বৈঠকে ভারত যোগ দিলেও যৌথ বিবৃতিতে সই করেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া ভারতের পক্ষে একটু কঠিন কারণ দেশের ৬০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামের জন্য রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল ভারত।
শুধু সামরিক সরঞ্জাম নয়, তেল, সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও রাশিয়া থেকে আমদানি করে ভারত।
অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে বরাবর রাশিয়ার বিরোধিতা করেছে জাপান, জারি করেছে নিষেধাজ্ঞাও। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশের বিভিন্ন সংস্থার দিকে নজর ঘুরিয়েছে জাপান। জাপান সরকারের মুখ্যসচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞার একটি নতুন নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে চিন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং উজ়বেকিস্তানের কিছু সংস্থার উল্লেখ রয়েছে। মনে করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত জাপানের তরফ থেকে কোনো ‘অফিসিয়াল নোটিশ’ পাঠানো হয়নি ভারতকে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও দাগ ফেলবে না বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।