এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আরজি করের কান্ড নিয়ে তোলপাড় হয়ে আছে রাজ্যসহ গোটা দেশ। আরজি কর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে শুধু দেশ নয় এমনকি বিদেশেও উঠেছে আন্দোলনের আবহ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষে দৈনিক গড়ে ৮৬ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে কি বাকি ৮৫ টি ধর্ষণের ঘটনা চাপা পরে থাকল? কোথাওবা ঘটনা চাপা পরে যায় সামাজিক কারণে আবার কোথাও বা ঘটনাকে চেপে দেওয়া হয় শক্তিশালী ক্ষমতা প্রদর্শন করে। আরজি কর ঘটনার পরে পরেই উঠে এসেছে আরও অনেক গুলি নির্যাতনের ঘটনা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে ফুটে উঠেছে বদলাপুরের দুই ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনা।
আরজি করের ঘটনাটি সামনে আসায় সমাজের মুখে পরে গেল কলঙ্কের ছাপ। অন্যদিকে আরজিকরের চিকিৎসকের মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল প্রশাসনের কাছে, মায়েরা কতটা নিরাপত্তার ভুয়ো আশ্বাসে থাকে খাস কলকাতার বুকেও। আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা সমাজের বাস্তব চিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলল। ২০২১ সালের সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল এনসিআরবি তাতে বলা হয়েছিল, ভারতবর্ষে প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৪৯ জন মহিলা যৌণ হেনস্থার শিকার হন। তাদের রিপোর্ট মোতাবেক এক বছরে ভারতে চার লক্ষ আঠাশ হাজার মহিলা এই ধরনের আক্রমণের শিকার। এই তথ্যই বলে দেয় এই দেশে নারী সুরক্ষার প্রশ্নটি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।
ইউনিসেফ-এর সমীক্ষা জানাচ্ছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নাবালিকার বিবাহ হয় এই দেশেই। দুনিয়া জুড়ে যত নাবালিকা বিবাহের ঘটনা ঘটে তার প্রায় ৩৩ শতাংশের ওপর ঘটে শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই। এদিকে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, এই দেশের পনেরো থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৩০ শতাংশই ঘরে হোক কিংবা বাইরে, অবধারিত যৌণ হেনস্থার শিকার।
তথ্যগুলো এই কারণেই রাখা, শুধু আর জি করের সমাধান চাইতেই যদি পথে নামা হয় তাহলে আবার অন্য কোথাও অন্য কোনও ঘটনা ঘটলে, আর জি করের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখা হবে। এই আন্দোলন যদি নিভে না গিয়ে সার্বিক সমাজ বদলের জন্য একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রয়াস হয়, তাহলেই পথে নামা সার্থক। নারীরা নিগ্রহের শিকার হন অজস্র কারণে। তার সমাধান খুঁজতে বহুমুখী প্রয়াস এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আরজি কর হোক তার সূত্রপাতের মাইল ফলক। “বদলাপুর” আর নয়, দেশের প্রকৃত বদল চাই।