প্রচন্ড গরমের তীব্রতা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে আমরা সকলেই সুতির কাপড় ব্যবহার করে থাকি। হালকা, নরম এবং শীতল স্পর্শের এই কাপড় গরমের দিনগুলোকে সহনশীল করে তোলে। কিন্তু কি জানেন, এই সুতির কাপড় আবিষ্কারের ইতিহাস কতটা পুরনো এবং রহস্যময়।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়, প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতায় সুতির কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। মৃৎশিল্প, পোড়ামাটির মূর্তি এবং পোশাকের অবশিষ্টে সুতির তন্তুর চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, ‘সিন্ধু তুলা’ নামक এক প্রজাতির তুলার গাছ থেকেই তখন সুতা তৈরি করা হত।
অন্যদিকে মিশরের প্রাচীন সভ্যতায়ও সুতির কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়। প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত মমিদের পোশাক থেকে সুতির তন্তুর অস্তিত্ব উন্মোচিত হয়েছে। মিশরীয়রা ‘Byssus’ নামক এক প্রজাতির তুলার গাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করত তারা।
পাশাপাশি গ্রীক ও রোমানরাও সুতির কাপড়ের সাথে পরিচিত ছিল। ‘Xylon’ নামে পরিচিত এক প্রজাতির তুলার গাছ থেকে তারা সুতা তৈরি করত।
এদিকে ভারতও ছিল না পিছিয়ে। ভারতীয় উপমহাদেশে সুতির কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ‘গঙ্গা তুলা’ নামক এক প্রজাতির তুলার গাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে তৈরি হত ‘মসলিন’ নামক বিখ্যাত সুতির কাপড়।
অন্য দিকে জানা যায়,চীনে সুতির কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়েছিল প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ‘Asiatic cotton’ নামক এক প্রজাতির তুলার গাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন ধরণের সুতির কাপড় তৈরি করত।
মধ্যযুগে ইউরোপে সুতির প্রচলন:
মধ্যযুগে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সুতির কাপড় ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে। ‘Bombazine’ নামক সুতির কাপড় তখন বেশ জনপ্রিয় ছিল।
শিল্প বিপ্লব এবং আধুনিক যুগ:
শিল্প বিপ্লবের সময় সুতা কাটার যন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে সুতির কাপড়ের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। আজকের দিনে বিভিন্ন ধরণের সুতির কাপড় তৈরি করা হয় এবং পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।