তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বছর আগে স্পেনে গিয়ে ‘লা লিগার’ সভাপতির সাথে একটি বৈঠক করেছিলেন। যদিও এটি স্পষ্ট নয় যে তিনি স্পেন সফরের সময় “প্রেসিং ফুটবল” শিখেছিলেন কী না, কিন্তু কাকতালীয় ভাবে যখন জার্মানিতে ইউরো কাপে স্পেন সবচেয়ে বেশি ‘প্রেসিং ফুটবল’ ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের পর রাজ্যে ‘প্রেসিং ফুটবল’ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার মমতা রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী, সচিব,পুলিশ আধিকারিক এবং জেলা শাসকদের সাথে নবান্নে একটি বৈঠক করেছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার তিনি পুরনিগমগুলির মেয়র, বিভিন্ন দফতরের কর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। সোমবার, তিনি আবার পুরসভার সব চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করবেন (ঝালদা এবং তাহেরপুর ছাড়া)। এক সপ্তাহের মধ্যে এই তিনটি বৈঠক রাজ্য প্রশাসনকে আলোড়িত করেছে এবং সামগ্রিক রাজ্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে বিজেপি রাজ্যের ৯২টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে, যা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে বেশি। ফলস্বরূপ মমতা ‘শূন্যস্থান’ পূরণ করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত শাসক দলের অভ্যন্তরীণ খবর থেকে জানা যায় যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ডে ‘অসুখী’। তিনি সম্প্রতি তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টের মাধ্যমে সংগঠন থেকে ‘সংক্ষিপ্ত বিরতি’ ঘোষণা করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি মনে করেন শহুরে এলাকায় খারাপ ফলের জন্য জবাবদিহি প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, অভিষেকের পোস্টের পর থেকেই নবান্ন নানা পদক্ষেপ শুরু করেছে। তার পোস্টে, অভিষেক মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে প্রতিশ্রুত আবাসন প্রকল্পের তহবিল সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয় এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। পরবর্তীকালে, নবান্ন আবাসন প্রকল্পের উপর একটি সমীক্ষা শুরু করেছে।
বিরোধীরা অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই মমতার প্রশাসনিক তৎপরতাকে কটাক্ষ করেছেন। রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্যে বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে যে অসুখ বাসা বেঁধেছে, তার কোনও প্রতিষেধক নেই। তৃণমূলও সেটা জানে। মুখ্যমন্ত্রী যতই চেষ্টা করুন, তৃণমূলের বিসর্জন অবশ্যম্ভাবী।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এ সব দেখে মনে হচ্ছে, ‘জয় করেও ভয় কেন তোর যায় না’! পুরসভা নিয়ে মমতার উদ্বেগের কারণ ২০২২ সালে লুটের ভোট। পুরসভা ভোটে যে মানুষের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হয়নি, তা স্পষ্ট। তাই ওঁকে এত মাথা ঘামাতে হচ্ছে।’’ পাল্টা শাসকদলের নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল মানে অবিরাম শুদ্ধিকরণ। তাই মানুষের কাছে তৃণমূলের কোনও বিকল্প নেই। জয়ে আমাদের মাথা ঘুরে যায় না। আমরা দেখি কোথায় খামতি। দল-সরকার মিলেমিশে সেই খামতি মেটানোর কাজ শুরু করেছে।’’
সরকারি জমি ‘অধিগ্রহণ’ নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা। কেন দখল বন্ধ করা হচ্ছে না তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের সম্মুখীন হন পুলিশ আধিকারিকরাও। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, অর্থসচিব মনোজ পন্থ, এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং আইএএস অফিসার প্রভাত মিশ্র সহ সরকারি জমি দখল রোধে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৫ জুলাই ইউরো কাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ‘প্রেসিং ফুটবল’ খেলে স্পেন চ্যাম্পিয়ন হবে কি না, তা তখনই জানা যাবে। তবে মমতা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন কারণ তার ‘প্রেসিং ফুটবল’ খেলার জন্য প্রায় দুই বছর সময় রয়েছে।